Introduce to Freelancing for Bangladeshi
(ডাটা ফ্রিল্যান্সিং কাজের পরিচিতি)
বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে তরুণদের কাছে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ের একটি হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। যদিও আমাদের দেশে এখনও এ বিষয়টি নতুন, কিন্তু এরই মধ্যে অনেকে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্যকে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছেন। পড়ালেখা শেষে বা পড়ালেখার সাথে সাথে ফ্রিল্যান্সিং এ গড়ে নিতে পারেন আপনার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার। ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে মাল্টি বিলিয়ন ডলারের একটা বিশাল বাজার। উন্নত দেশগুলো কাজের মূল্য কমানোর জন্য আউটসোর্সিং করে থাকে। আমাদের পার্শবর্তী দেশ ভারত এবং পাকিস্তান সেই সুযোগটিকে খুবই ভালভাবে কাজে লাগিয়েছে। আমরাও যদি ফ্রিল্যান্সিং এর বিশাল বাজারের সামান্য অংশ কাজে লাগাতে পারি তাহলে এটি হতে পারে আমাদের অর্থনীতি মজবুত করার শক্ত হাতিয়ার।
গতানুগতিক চাকুরীর বাইরে নিজের ইচ্ছামত কাজ করার স্বাধীনতা হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। ইন্টারনেটের কল্যানে এখন আপনি খুব সহজেই একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেন। এখানে একদিকে যেরকম রয়েছে যখন ইচ্ছা তখন কাজ করার স্বাধীনতা, তেমনি রয়েছে বিভিন্নধরনের কাজ বাছাই করার স্বাধীনতা। আয়ের দিক থেকেও অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং এ রয়েছে অভাবনীয় সম্ভাবনা। এখানে প্রতি মূহুর্তে নতুন নতুন কাজ আসছে। প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েবসাইট, গেম, 3D এনিমেশন, প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, সফ্টওয়্যার বাগ টেস্টিং, ডাটা এন্ট্রি - এর যেকোন এক বা একাধিক ক্ষেত্রে আপনি সফলভাবে নিজেকে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে তৈরি করে নিতে পারেন। তবে প্রথমদিকে আপনাকে একটু ধ্যর্য এবং কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে হবে। এই প্রতিবেদনটি তাই এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে আপনি একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিজেকে সফলভাবে প্রকাশ করতে পারেন।
ইন্টারনেটে অনেকগুলো জনপ্রিয় ওয়েবসাইট রয়েছে যারা ফ্রিল্যান্সিং সার্ভিস দেয় যাদেরকে বলা হয় ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস। এগুলো থেকে যেকোন একটিতে রেজিস্ট্রিশনের মাধ্যমে আপনি শুরু করতে পারেন। এসব ওয়েবসাইটে যারা কাজ জমা দেয় তাদেরকে বলা হয় Buyer বা Client এবং যারা এই কাজগুলো সম্পন্ন করে তাদেরকে বলা হয় Provider বা Coder. একটি কাজের জন্য অসংখ্য কোডাররা Bid বা আবেদন করে এবং ওই কাজটি কত টাকায় সম্পন্ন করতে পারবে তা উল্লেখ করে। এদের মধ্য থেকে ক্লায়েন্ট যাকে ইচ্ছা তাকে নির্বাচন করতে পারে। সাধারণত পূর্ব কাজের অভিজ্ঞতা, টাকার পরিমাণ এবং বিড করার সময় কোডারের মন্তব্য কোডার নির্বাচন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কোডার নির্বাচন করার পর ক্লায়েন্ট কাজের সম্পূর্ণ টাকা ওই সাইটগুলোতে জমা করে দেয়। এর মাধ্যমে কাজ শেষ হবার পর সাথে সাথে টাকা পাবার নিশ্চয়তা থাকে। পুরো সার্ভিসের জন্য কোডারকে কাজের একটা নির্দিষ্ট অংশ ওই সাইটকে ফি বা কমিশন হিসেবে দিতে হয়। এই পরিমাণ ওয়েবসাইট এবং সার্ভিসভেদে ভিন্ন ভিন্ন (১০% থেকে ১৫%)। কয়েকটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট হচ্ছে:
www.RentACoder.com
রেন্ট-এ-কোডার এ প্রায় দুই লক্ষ কোডার রেজিস্ট্রেশন করেছে। এই সাইটে প্রতিদিনই প্রায় ২৫০০ এর উপর কাজ পাওয়া যায়। সাইটের সার্ভিস চার্জ বা কমিশন হচ্ছে প্রতিটি কাজের মোট টাকার ১৫% যা কাজ সম্পন্ন হবার পর কোডারকে পরিশোধ করতে হয়। এই প্রতিবেদনটি মূলত রেন্ট-এ-কোডার সাইটকে ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। তবে মূল ধারনা প্রতিটি সাইটের ক্ষেত্রেই প্রায় একই।
www.GetAFreelancer.com
এই সাইটে মোট কোডার বা প্রোভাইডারের সংখ্যা হচ্ছে প্রায় সাত লক্ষ। এই সাইটেও প্রায় ২৫০০ এর উপর কাজ প্রতিদিন পাওয়া যায়। সাইটির সার্ভিস চার্জ হচ্ছে প্রতিটি কাজের মোট টাকার ১০%। তবে গোল্ড মেম্বারদের জন্য কোন সার্ভিস চার্জ নেই। গোল্ড মেম্বার হতে প্রতি মাসে আপনাকে মাত্র ১২ ডলার পরিশোধ করতে হবে। নতুন ইউজারদের জন্য এই সাইটে ট্রায়াল প্রোজেক্ট নামে একটি বিশেষ ধরনের কাজ পাওয়া যায় যাতে শুধুমাত্র নতুন কোডারাই বিড করতে পারবে। ফলে প্রথম কাজ পেতে আপনাকে খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না।
www.Joomlancers.com
এই সাইটে শুধুমাত্র Joomla এর কাজ পাওয়া যায়। Joomla হচ্ছে একটি ওপেনসোর্স কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। যারা Joomla তে পারদর্শী তারা এই সাইটে বিড করে দেখতে পারেন। এখানে প্রায় ৫৫০০ ফ্রিল্যান্সার রেজিস্ট্রেশন করেছে আর প্রতিদিন প্রায় ১৫০ টি কাজ পাওয়া যায়। এই সাইটে কমিশন হিসেবে প্রতিটি কাজের ১০% টাকা কোডারকে পরিশোধ করতে হবে। এই সাইটেও আপনি গোল্ড মেম্বার হতে পারবেন। গোল্ড মেম্বার হতে হলে আপনাকে প্রতি মাসে ৫০ ডলার প্রদান করতে হবে।
www.oDesk.com
এক সাইটের ফিচার উপরে উল্লেখিত সাইটগুলো থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে প্রোভাইডারকে ঘন্টা হিসেবে কাজের জন্য অর্থ প্রদান করা হয়। ক্লায়েন্ট আপনাকে সম্পূর্ণ প্রজেক্টের জন্য বা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য (কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস এর জন্য) নিয়োগ করতে পারে। রেজিষ্ট্রেশন করার সময় প্রতি ঘন্টায় আপনার কাজের মূল্য উল্লেখ করে দিতে হবে। কাজ শেষে আপনি যত ঘন্টা কাজ করেছেন ঠিক ততটুকু পরিমাণ টাকা ক্লায়েন্ট আপনাকে প্রদান করবে। কাজ করার মূহুর্তে আপনার ব্যয়কৃত সময় নির্ধারণ করার জন্য আপনাকে একটি সফ্টওয়্যার চালু রাখতে হবে, যা একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর আপনার ডেস্কটপের স্ক্রিসশট এবং অন্যান্য তথ্য ক্লায়েন্টের কাছে পাঠাবে। ফলে ওই সময় আপনি কাজ করছেন কিনা ক্লায়েন্ট সহজেই নির্ধারণ করতে পারবে। তবে অন্য সাইটগুলোর মত এখানেও অনেক কাজ পাওয়া যায় যেখানে সম্পূর্ণ প্রজেক্টের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয়। এই সাইটে প্রতি কাজের জন্য ১০% টাকা কমিশন হিসেবে প্রদান করতে হয়। যেহেতু বেশিরভাগ কাজ ঘন্টা হিসেবে প্রদান করা হয় তাই অন্য সাইটগুলোর তুলনায় এই সাইট থেকে অনেক বেশি পরিমাণে আয় করা সম্ভব।
*********************************************************
অনলাইনে কাজের প্রকারভেদ
অনলাইনে প্রায় সকল ধরনের কাজ করা যায়। আপনি যে কাজে পারদর্শী তা দিয়েই ঘরে বসে আয় করতে পারেন। এজন্য আপনাকে যে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতকধারী হতে হবে তা কিন্তু নয়। আর আপনি যদি মনে করেন কোন একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে আপনি বিশেষ পারদর্শী নন তাহলে ডাটা এন্ট্রির মত কাজগুলো সহজেই করতে পারেন। ছাত্ররাও ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে পড়ালেখার পাশাপাশি বাড়তি আয়ের একটা ব্যবস্থা করতে পারেন। ইন্টারনেটে নিম্নলিখিত প্রকারের কাজ পাওয়া যায়:
- প্রোগ্রামিং
- ওয়েবসাইট তৈরি
- ডাটাবেইজ
- গ্রাফিক্স ডিজাইন
- এনিমেশন
- গেম তৈরি
- ডকুমন্টেশন
- প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট
- সফ্টওয়ার টেস্টিং
- ডাটা এন্ট্রি
ইন্টারনেটে কাজের তুলনামূলক চিত্র
ইন্টারনেটে কি ধরনের কাজ কতটুকু পাওয়া যায় তা নিচের চার্টের মাধ্যমে উল্লেখ করা হল। তথ্যগুলো ২৫/০৫/২০০৮ তারিখে www.GetACoder.com সাইট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
কাদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং
অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন সহজ, যদি আপনি হোন -
- একজন স্মার্ট।
- সমসাময়িক প্রযুক্তি সম্পর্কে অবগত, বিশেষ করে ইন্টারনেটের বিভিন্ন ধরনের সাইট ও সার্ভিস সম্পর্কে ভাল ধারনা।
- কোন বিশেষ ক্ষেত্রে পারদর্শী, তা হতে পারে - প্রোগ্রামিং, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, ওয়েসাইট মেইন্টেন্যান্স, ওয়েবসাইট প্রোমোশন, ফটোশপ, গিম্প, ফ্লাশ, 2D এনিমেশন, 3D এনিমেশন, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল ইত্যাদি আরো অসংখ্য বিষয়।
- ইংরেজি পড়তে এবং লিখতে মোটামুটি দক্ষ।
- নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে সদা প্রস্তুত, কারণ প্রায় সময় দেখবেন বায়ার এমন একটা কাজের কথা বলেছে যা আপনি আগে কখনও শোনেননি। সেই ধরনের কাজের সমাধান সার্চ করে বের করা এবং অল্প সময়ে তাতে দক্ষতা আর্জন খুবই জরুরী।
উপরের যেকোন একটিতে যদি আপনার দূর্বলতা থেকে থাকে তাহলে আমি বলব আপনার ফ্রিল্যান্সার হওয়ার এখনও সময় হয়নি। প্রথমে সময় নিন, নিজেকে প্রস্তুত করুন এবং তারপর ঝাপিয়ে পড়ুন।
আমি আমার চারপাশের কয়েকজনকে দেখেছি তাদেরকে তাদেরকে ফ্রিল্যান্সিং কি এবং কিভাবে করতে হয় তা দুইবার বলতে হয়নি। তারা সম্পূর্ণ নিজের মেধায় আজ মাসে কয়েক হাজার ডলার আয় করছে। দুইবছর আগে আমি যখন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেছিলাম, তখন এই ধারনাটা বেশিরভাগের কাছেই পরিষ্কার ছিল না। শুধু জানতাম অনলাইনে রেন্ট-এ-কোডার, গেট-এ-ফ্রিল্যান্সার, গেট-এ-কোডার থেকে কাজ পাওয়া যায়। তারপর সাহস করেই শুরু করেছি, আজও ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করে যাচ্ছি। তবে এখানে একটা ব্যাপার হল, আমি একটি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ফার্মে প্রোগ্রামার হিসেবে একবছর কাজ করার ফলে আমি ছিলাম ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টে দক্ষ। তাই একটা দুইটা কাজ পাবার পর, আমাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
অন্যদিকে আমার এক বন্ধু ছিল, যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় খুব একটা প্রোগ্রামিং করে নি এবং ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কে ভাল ধারনা ছিল না। আমাকে ফ্রিল্যান্সিং করতে দেখে সেও শুরু করে। সে ভেবেছিল, কাজ করতে করতে সে ওয়েব ডেভেলপমেন্টে এক্সপার্ট হয়ে যাবে। তবে বাস্তবতা হল, তাকে কেউ কাজ দেয়নি এবং একটানা কয়েকমাস চেষ্টা করার পর সে ফ্রিল্যান্সিং ছেড়ে দেয়। এখন সে একটি বড় সফটওয়্যার ফার্মে কাজ করছে আর পরিকল্পনা করছে ভবিষ্যতে আবার ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার।
তাই কাজ না শিখে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করে কোন লাভ নেই, তাতে বরং আপনার সময় নষ্ট হবে এবং নিজের উপর আত্মবিশ্বাস কমে যাবে। চেষ্টা চালিয়ে যান, আপনিও সফল হবেন।
********************************************************
যেভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন
প্রথমে যে কোন একটি ফ্রিল্যান্সিং সাইটে রেজিস্ট্রশন করে নিতে হবে। রেজিস্ট্রশন করার সময় আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, ঠিকানা, ইমেইল ইত্যাদি সঠিকভাবে দিতে হবে। রেজিস্ট্রেশনের একটি ধাপে আপনার একটি প্রোফাইল/রেজ্যুমে তৈরি করতে হবে যেখানে আপনি কোন কোন ক্ষেত্রে পারদর্শী তা উল্লেখ করবেন। এখানে আপনি আপনার পূর্ব কাজের অভিজ্ঞতা, ওয়েবসাইট লিংক ইত্যাদি দিতে পারেন। তবে প্রোফাইলে ইমেইল বা অন্যকোন তথ্য প্রকাশ করতে পারবেন না যাতে কেউ আপনার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে। পরবর্তীকালে এই প্রোফাইল কাজ পাবার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সফলভাবে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হবার পর, এখন আপনি বিড করা শুরু করে দিতে পারেন। ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে প্রতি মূহুর্তে নতুন কাজ আসছে। আপনার পারদর্শীতা আনুযায়ী প্রতিটা কাজ দেখতে থাকুন। প্রথম কয়েক দিন বিড করার কোন প্রয়োজন নেই। এই কয়েকদিন ওয়েবসাইটি ভাল করে দেখে নিন। ওয়েবসাইটের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন এবং সাহায্যকারী আর্টিকেল পড়ে ফেলতে পারেন। একটি কথা মনে রাখবেন, প্রথমদিকে কাজ পাওয়া কিন্তু সহজ নয়। তাই আপনাকে ধর্য্যসহকারে বিড করে যেতে হবে। প্রথম কাজ পেতে হয়ত ১০ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। কয়েকটি কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করার পর আপনাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। তখন ক্লায়েন্টরাই আপনাকে খোঁজে বের করবে।
********************************************************
ফ্রিল্যান্সিং-এর কয়েকটি গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়
শুরুতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনাকে জানতে হবে। সেগুলো হল:
রেটিং (Rating) - একটি কাজ সম্পন্ন হবার পর ক্লায়েন্ট আপনার কাজের দক্ষতার উপর ভিত্তি করে ১ থেকে ১০ এর মধ্যে আপনাকে রেটিং বা ভোট দিবে। এখানে সর্বোত্তকৃষ্ট রেটিং হচ্ছে ১০। নতুন কাজ পাবার ক্ষেত্রে এই রেটিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই সবসময় চেষ্টা করবেন ১০ রেটিং পেতে। এজন্য কাজ জমা দেয়ার আগে ভাল করে দেখে নিন আপনি ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী সকল কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করেছেন কিনা। তারপর নির্ধারিত সময় শেষ হবার পূর্বেই কাজ জমা দিন। গড় রেটিং ৯ এর চেয়ে কম হলে ধীরে ধীরে নতুন কাজ পাবার সম্ভাবনা কমে যাবে।
রেংকিং (Ranking) - ফ্রিল্যান্সিং সাইটে সকল কোডারের মধ্যে আপনার অবস্থান কত তা জানা যায় রেংকিং এর মাধ্যমে। রেন্ট-এ-কোডারে আপনার গড় রেটিং এবং সর্বমোট কত টাকার কাজ সম্পন্ন করেছেন তা দিয়ে আপনার অবস্থান নির্ধারিত হয়। রেটিং এর মত রেংকিংও নতুন কাজ পাবার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যার রেংকিং যত সামনের দিকে তার কাজ পাবার সম্ভাবনা অন্যদের চাইতে বেশি। তবে বিড করার সময় আপনি যদি ক্লায়েন্টকে আপনার আত্মবিশ্বাস আর সম্ভব হলে পূর্ব কাজের অভিজ্ঞতা দেখানোর চেষ্টা করুন, তাহলে সবাইকে পেছনে ফেলে আপনিই কাজ পেয়ে যাবেন। পূর্ব কাজের অভিজ্ঞতা না থাকলে আপনি ক্লায়েন্টকে আপনার আইডিয়া ভালভাবে ব্যাখ্যা করুন।
ডেডলাইন (Deadline) - কাজ শুরু করার পূর্বে ক্লায়েন্ট কাজ জমা দেবার একটি ডেডলাইন বা সর্বোচ্চ সময়সীমা উল্লেখ করে দেয়। আপনার যদি মনে হয় যে এই কাজ আপনি ক্লায়েন্ট কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে জমা দিতে পারবেন না তাহলে কাজ শুরু করার পূর্বেই ক্লায়েন্টকে অনুরোধ করুন ডেডলাইন সময় বাড়িয়ে দিতে। ক্লায়েন্ট সম্মত হলে কাজটি শুরু করুন। আর যদি ক্লায়েন্ট সময় বাড়াতে আপত্তি জানায় তাহলে কাজটি গ্রহন না করাই আপনার জন্য ভাল হবে। কারন ডেডলাইনে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে যদি আপনি কাজটি জমা দিতে না পারেন তাহলে কাজের সম্পূর্ণ টাকাই আপনি হারাতে পারেন। উপরন্তু ক্লায়েন্ট আপনাকে একটি নিম্নমানের রেটিং দিয়ে দিতে পারে। তাই কখনও যদি এরকম কোন পরিস্থিতির উদ্ভব হয় তখন অনতিবিলম্বে আপনার বর্তমান অবস্থা ক্লায়েন্টকে জানান এবং ডেডলাইন সময় বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করুন।
মেডিএশন/আর্বিট্রেশন (Mediation/Arbitration) - কখনও যদি ক্লায়েন্ট আপনাকে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায় বা সম্পূর্ণ কাজ জমা দেবার পর আপনাকে বলে যে আপনি ঠিকভাবে সকল কাজ সম্পন্ন করেননি তাহলে আপনি ফ্রিল্যান্সিং সাইটের মেডিএশন/আর্বিট্রশনের সাহায্য নিতে পারেন। এই সার্ভিসের মাধ্যমে আপনি ওই সাইটের কাছে আপনার সমস্যা জানাতে পারেন। সাইটের কর্তৃপক্ষ তখন উভয়পক্ষের অভিযোগ শুনবে এবং কাজ চলাকালীন সময় ক্লায়েন্ট এবং আপনার মধ্যে যে ম্যাসেজ আদান-প্রদান হয়েছে তা যাচাই করে দেখবে। সবশেষে আপনার অভিযোগ সত্য হলে আপনি পুরো টাকা পেয়ে যাবেন। তবে যতটা সম্ভব আর্বিট্রেশনে না যাওয়াই উত্তম, কারন অনেকক্ষেত্রে দেখা গেছে কর্তৃপক্ষ ক্লায়েন্টকে সাপোর্ট করে এবং সেক্ষেত্রে আপনি কোন টাকা পাবেন না। আপনি দোষী প্রমাণিত হলে কর্তৃপক্ষ আপনাকে একটি নিম্নমানের রেটিং দিয়ে দিবে। তাই চেষ্টা করবেন আলোচনার মাধ্যমে ক্লায়েন্টের সাথে মীমাংসা করে নিতে। এরকম অনাকাংক্ষিত পরিস্থিতিতে না পড়তে চাইলে কাজ শুরু করার পূর্বে ক্লায়েন্টকে বলুন তাদের চাহিদা পরিষ্কার করে উল্লেখ করতে। ক্লায়েন্টকে সরাসরি ইমেইল না করে সকল ম্যাসেজ আদান-প্রদান ওই সাইটের ম্যাসেজ সিস্টেমের মাধ্যমে করুন।
এসক্রো (Escrow) - কাজ শুরু করার পর ক্লায়েন্ট কাজের সম্পূর্ণ টাকা ওই ফ্রিল্যান্সিং সাইটে জমা রাখে। এই জমা রাখাকে বলা হয় এসক্রো যা কাজ সম্পন্ন হবার পর কোডারের টাকা পাবার সম্ভাবনা নিশ্চিত করে। ক্লায়েন্ট টাকা এসক্রোতে জমা রাখা পূর্বে কাজ শুরু করা উচিত নয়।
0 comments:
Post a Comment